Sunday, October 13, 2013

৫ ভিটামিন গ্রহণ থেকে দূরে থাকুন


আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য প্রতিনিয়তই আমরা ভিটামিন ট্যাবলেট গ্রহণ করে থাকি। এটা আমাদের কাছে একটি সর্ব্বোচ মাধ্যম সুস্বাস্থ্য গঠনের জন্য ক্ষেত্রে। আমরা খুব ভালোভাবেই জানি ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা এবং ভিটামিনের অভাবে কি ভয়াবহ রোগ আমাদের আক্রান্ত করতে পারে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ জায়গাতেই খাবারের মধ্যে সন্নিবেশিত ভিটামিনের বাইরেও আলাদা করে ভিটামিন ট্যাবলেট ক্রয় করে সেবন করে থাকেন। প্রতিটি ফার্মিসিতেই প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে প্রচুর ভিটামিন ট্যাবলেট এবং ভিটামিন সিরাপ অথবা শক্তি বর্ধক সিরাপ নামে। এবং খুব দ্রুতই বাংলাদেশে ভিটামিন বিক্রির বেড়ে যাচ্ছে। সবাই ভিটামিনের অভাব পূরণের জন্য ভিটামিনযুক্ত খাবারের বদলে ভিটামিন ট্যাবলেট গ্রহণ করছে। কিন্তু এক্ষেত্রে জরুরি কথা হলো, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন প্রকার ভিটামিন ট্যাবেলট খাওয়া উচিত নয়। গবেষণা করে দেখা গেছে, ভিটামিন ট্যাবলেট সেবনের কারণে শরীরের ভিটামিন পূরণের চেয়ে শরীরের ক্ষতি সাধনের ঘটনাই ঘটছে বেশি । আর তাই আমাদের সর্বাধিক ব্যবহৃত যে ৫ টি ভিটামিন থেকে দূরে থাকবে হবে তা হলো :

ভিটামিন সি,

সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিটামিন ট্যাবলেটের নাম ‘ভিটামিন সি’। মজার বিষয় হলো এই ‘ভিটামিন সি’ পাওয়া আমাদের আশে-পাশের প্রায় সবগুলো শাক-সবজি ফল-মূলের মধ্যে কিন্তু আমরা ট্যাবলেটে এই ভিটামিনটি সেবন করতে বেশি আগ্রহি হই। সম্প্রতি অনেক মানুষের স্কাভি রোগের কারণে মৃত্যু ঘটছে। এর পিছনে একটাই কারণ তাহলো ‘ভিটামিন সি’র অভাব। আমরা একটু পিছনে ফিরে যাই ১৭০০ সালে স্কটল্যান্ডের এক বিখ্যাত ডাক্তার জেমস লাইন্ড এক্সপেরিমেন্ট করে দেখেছেন, বাতাবী লেবু স্কাভি রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তখনো কিন্তু ভিটামিন সি আবিস্কৃত হয়নি। ‘ভিটামিন সি’ আবিস্কৃত হয় ১৯৩০ সালের দিকে। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় ভিটামিন সি। এই জনপ্রিয়তার পেছনের গল্প হলো বিখ্যাত রসায়নবিদ লিনাস পউলিং এর ১৯৭০ সালে দেয়া ভূল ব্যাখ্যা। যেখানে সে উল্লেখ করেছে, ‘মেগা ডোস অব সি’ যেকোন রোগ থেকে মুক্তি দেয়। কিন্তু সে সম্পূর্নভাবেই ভূল ব্যাখ্যা দিয়েছিলো। যদিও তিনি একজন প্রখ্যাত নোবেল প্রাপ্ত রসায়নবিদ। তার ভূল ব্যাখার প্রমাণ মেলে, পউল অফিট এর ‘ডু ইউ বিলিভ ইন ম্যাজিক’ নামের বইটিতে। মোদ্দা কথা হলো, সাধারণভাবে ভিটামিন সি স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। কিন্তু মেগা ডোস অব ২০০০ এমজি অথবা তার উপরের ভিটামিন সি’র কারণে কিডনিতে স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এটা গ্রহণ করা উচিত নয়।

ভিটামিন এ এবং বেটা কেরোটিন,

ভিটামিন এ, সি এবং ই সবসময় এ্যান্টি অক্সিড্যান্ট হিসেবে কাজ করে। যা শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউশনের গবেষণায় বলা হয়েছে, ধূমপায়ীদের মধ্যে যাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ থাকে তাদের ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম। ভিটামিন এ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকলেও অতিরিক্ত ভিটামিন এ এর ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরণের বিষাক্ত উপাদানের জন্ম হয়। যার কারণে মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত ভিটামিন এ সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে লিভারে। ধারণা করা হয়, দক্ষিণমেরু অঞ্চলে সমুদ্র যাত্রার সময়ে ডগলাস ম্যাওসন অবাক ভাবে বেঁচে গিয়েছিলো কিন্তু তার সহযাত্রীরা সবাই মারা গিয়েছিলো ‘ভিটামিন এ’ এর বিষাক্ত প্রক্রিয়ায়।

ভিটামিন ই,

ক্যান্সার প্রতিরোধে ‘ভিটামিন ই’ এই জনপ্রিয় ব্যাখ্যাটি পুরোপুরি মিথ্যা। গত বছওে আমেরিকায় ৩৫ হাজার ৫শ ৩৩ জন মানুষকে নিয়ে ‘ভিটামিন ই’ এবং ‘প্রোস্টেট ক্যান্সার’ এর উপর গবেষণা চালানো হয়েছে। গবেষণায় উঠে এসেছে বেশির ভাগ ক্যান্সারের কারণ হলো অতিরিক্ত ‘ভিটামিন ই’ ক্যাপসুল গ্রহণ করা। তাছাড়া আরেকটি রিভিউতে জনস হোপকিং ইউনিভার্সিটি, এডগার মিলার এবং লরেন্স এ্যাপেল বলেছেন, অতিরিক্ত ‘ভিটামিন ই’ ক্যাপসুল সেবনের ফলে ক্যান্সার হয়ে থাকে। ‘ভিটামিন ই’ ক্যাপসুলের ব্যপারে দ্যা ম্যালো ক্লিনিক সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন এইভাবে, গবেষণা বলে নিয়মিত হাই ব্লটেজ ‘ভিটামিন ই’ ক্যাপসুল গ্রহণের কারণে মৃত্যুর হার বেড়ে যাচ্ছে। আর তাই আমাদের সবার উচিত ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত ‘ভিটামিন ই’ ক্যাপসুল সেবন থেকে বিরত থাকা ।

ভিটামিন বি ৬,

‘ভিটামিন বি’, তার পাশাপাশি ‘ভিটামিন বি ৬’ এবং ‘বি ১২’ প্রচুর খাবারের মধ্যে সংরক্ষিত থাকে। এই ভিটামিনগুলোর অভাব খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু খাবারের বাইরে আলাদাভাবে ’ভিটামিন বি ৬’ ট্যাবলেট গ্রহণ করলে শরীরে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির সৃষ্টি করতে পারে বলে জানিয়েছেন, এনআইএইচ ওয়েবসাইট। প্রচুর পরিমাণে ‘ভিটামিন বি ৬’ ট্যাবলেট গ্রহণের ফলে মানুষের শরীরের নার্ভস নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া সুস্থ্য মানুষের হাত-পা অথবা শরীরের নড়াচড়া করার ক্ষমতা হাড়ানোর সম্ভাবনাও আছে। তাই কিছুতেই আমাদের ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ভিটাবিন বি গ্রহণ করা উচিত না।

মাল্টি ভিটামিন,

বাংলাদেশে মাল্টি ভিটামিন সেবনের সংখ্যা সর্বাধিক। এবং প্রত্যেকের কাছেই মাল্টিভিটামিন সেবনের ব্যপারে ভালো খবর পাওয়া যায়। প্রতিনিয়ত মানুষ তার শরীরের বিভিন্ন ক্ষয় পূরণের জন্য মাল্টিভিটামিন ব্যবহার করছে। অনেক সময় শরীরে অতিরিক্ত শক্তি বর্ধনেও এইগুলোর ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু সত্য খুবই কঠিন, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়া পিছনে একটা বড় কারণ হচ্ছে নিয়মিত দীর্ঘদিন-যাবত ‘মাল্টি ভিটামিন’ ট্যাবলেট অথবা মাল্টিভিটামিন আছে এমন জিনিস সেবন করা। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো উপাদানগুলো হলো ভিটামিন বি ৬, ফলিক এসিড, আইরন, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক এবং কপার। এর প্রতিটি উপাদানই মানুষকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে নেয়। বাংলাদেশে এই ধরণের মাল্টি-ভিটামিন উপাদানগুলো পাওয়া যায় বিভিন্ন এ্যার্নজি ড্রিঙ্ক অথবা পানীয়র মধ্যে যা শক্তি বর্ধকের নামে মানুষের সমস্ত শক্তি নিঃশেষ করে দেয়।

সমস্ত কিছু বিবেচনায় এটা আমাদের কাছে পরিস্কার হয়েছে যে, এই ৫ টি ভিটামিন সামন্য সুবিধা অথবা কোন সুবিধাই আমাদের জন্য বয়ে আনে না। ভিটামিন ট্যাবলেট কখনোই আপনার ক্লান্ত দূর করে দিতে পারবে না। ভিটামিন ট্যাবলেট কখনোই আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারবে না। বরং আমাদের তিলে তিলে অসুস্থ্য করে তুলতে সাহায্য করবে। যদি ভিটামিন এই সব ক্ষতিই করে তবে আমরা কেন আলাদাভাবে ভিটামিন ট্যাবলেট গ্রহণ করবো? তাই আমাদের উচিত এই ভিটামিনগুলো বর্জন করা। যদি আপনার শরীরের অতিরিক্ত ভিটামিন ট্যাবলেটের জরুরী হয়ে উঠে তবে একজন দক্ষ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন ট্যাবলেট সেবন করাটাই শ্রেয়।

No comments:

Post a Comment